সুহৃদ চাকমার সংক্ষিপ্ত জীবনী

চাকমা সাহিত্যে সুহৃদ একটি পরিচিত, চির ভাস্বর নাম। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক, সমালোচক ও গল্পকার। তাঁর সাহিত্যচর্চার বয়স তেমন বেশী নয়। কিন্তু অল্প সময়ে চাকমা সাহিত্যের জন্য যা দিয়ে গেছেন তা বিস্ময়কর। ডাক নাম লক্ক। সাদাসিদা সহজ সরল এক সাধারণ মানুষ কিন্তু মেধার মননে ছিলেন অসাধারন।
১৯৫৮ সালে ২০জুন বর্তমান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দিঘীনালা থানা থেকে প্রায় ১২ কিমি উত্তরে ‘বাঘেইছড়ি দোর’ নামক স্থানে সুহৃদ চাকমার জন্ম। পিতার নাম প্রফুল্ল কুমার চাকমা, মাতার নাম দেনি চাকমা। পিতা-মাতার ৭ সন্তানের মধ্যে তিনি ২য় সন্তান।
হ্যাংলা, লম্বা, ফর্সা রঙের ছিপছিপে শরীর। মুখে আত্ম-প্ৰত্যয় এর মিটিমিটি হাসি সমৃদ্ধ সুহৃদ। রাঙ্গামাটি ঈসথেটিক্স কাউন্সিল এর অন্যতম রূপকার, এর নামকরনকারী এবং প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সুহৃদ চাকমা।জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স ও এম.এ পাশ করেন।
১৯৮২ সালের ৩১ শে জানুয়ারী ২৪ বৎসর বয়সে বনরূপা নিবাসী ব্রজেন্দ্র তালুকদার ও ঝর্ণা তালুকদারের মেয়ে অর্চনা তালুকদার (স্বপ্না)এর সাথে তার বিয়ে হয়। তার দুই সন্তান৷ পুত্র সুভদ্র ও কন্যা সূচনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে সুহৃদ চাকমা বোয়ালখালী অনাথ আশ্রম বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখান থেকে রাঙ্গামাঢি এসে মােনঘর আবাসিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কয়েক বৎসর কাজ করেন। পরে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে একা প্রতিষ্ঠানে জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে থাকেন।
সুহৃদ চাকমার রচনাবলীর মধ্যে আছে: ৯টি প্রবন্ধ, ৪টি গল্প, ১টি কাব্য গ্রন্থ বার্গী, ৫টি অগ্রস্থিত কবিতা, সম্পাদকীয় সাহিত্য ৪টি এবং ২টি বই পর্যালোচনা,একটি প্রবন্ধ, একটি সমালোচনা আর কিছু চিঠি।
উপস্থাপনা রীতিই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে গাল্পিক হিসেবে। তার মতে গদ্য ছাড়া একটি ভাষা বিকশিত হতে পারেনা।
উপন্যাসে লেখার তাঁর ইচ্ছাও ছিল, ক্ষমতাও ছিল। কিন্তু পােড়া জুমের ছাই ভষ্মে তার স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে। সমালোচনা সাহিত্যেও সুহৃদ ছিলেন অনন্য। তার একটি অপার গুণ ছিল সত্য বলার। তার ক্ষুর ধার সমালোচনার জন্য তিনি অনেকের বিরাগভাজন হয়েছিলেন।
১৯৮৮ সালের ৮ই আগষ্ট সুহৃদ চাকমাকে তাঁর বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। বাসা থেকে যাবার সময় বলে গেছেন, “একটু পরে আসছি”। কিন্তু সেই একটু পরে আসাটা আর হয়ে উঠেনি। বাঙালী জনগােষ্ঠির পাশাপাশি পার্বত্যাঞ্চলের সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগােষ্ঠীসমূহ ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি উন্নয়নে সরকারী-বেসরকারী সংস্থার অর্থানুকুল্যে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে। এসব উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উৎসাহী এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হচ্ছে। আজ সুহৃদ চাকমা থাকলে এসব কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারতেন।
একজন ব্যক্তি যার বয়স মাত্র ৩০ বৎসর (১৯৫৮-১৯৮৮) যে মুহূর্তে তাঁর স্বপ্ন প্রস্ফুটিত হওয়ার সময়, অনভিজ্ঞ চিন্তা চেতনা সবেমাত্র পরিপক্ক হওয়ার সময় ঐ সময়ে তাঁকে বিদায় নিতে হলো তাঁর আজন্ম স্বপ্ন লালিত জন্মভূমিৱ বুক থেকে। সেক্সপিয়ারের ভাষায়-
“Gone to an undiscovered land from where no traveller returns”.
সূত্র: আলোর পথ দেখালো যারা (সম্পাদক- প্রমোদ বিকাশ কার্বারি)